শরীর ধ্বংসের পথে প্রতিদিনের খাবার!
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল! ছোটবেলা থেকে এ কথা আপনার কম করে হলেও কয়েক শত বার শোনা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। সুস্থ থাকলে আপনি সুখে থাকবেন ব্যাপারটা এমন না হলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সুস্থতা না থাকলে অন্য কোনো সুখই নিতান্তই তুচ্ছ বলে মনে হয়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে আমাদের তোড়জোড়ের কোনো কমতি নেই। আর সুস্থতার জন্য প্রথমেই যা চাই তা হলো পুষ্টিকর খাবার।
হ্যাঁ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম এসবের প্রয়োজন আছে বটে। তবে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার না পেলে এসব তেমন কোনো কাজেই আসে না।
কিন্তু আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা খাই তার সবই কি স্বাস্থ্যসম্মত? নিশ্চয়ই না!
অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় জাঙ্কফুড -তা টুকটাক খায় না এমন মানুষের হদিস মেলাই ভার। কিন্তু এ সব যে স্বাস্থ্যসম্মত নয় তা কে না জানে! এমন আরও অনেক খাবারই তো আমরা ক্ষতিকর জেনেও খেয়ে থাকি।
অনেক খাবার রয়েছে যেগুলোকে আমরা ভাবি স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর। কিন্তু আদতে তা নয়। বাহারি বিজ্ঞাপনের ছটা আর নানা পুষ্টিগুণের ঘোল খাইয়ে বছরের পর বছর ধরে আমাদের গেলানো হচ্ছে এসব। আর আমরাও গোগ্রাসে গিলছি।
হরলিক্স-ছোটবেলায় এর স্বাদ কমবেশি সবারই চেখে দেখা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো হরলিক্স এর পরিবর্তে Complan, Bournvita ইত্যাদি খেয়েছেন। ভারতীয় উপমহাদেশের মায়েদের বড় একটি অংশ বাড়ন্ত বাচ্চাদের এগুলো খাওয়ান। এগুলোর বেশিরভাগই মল্টেড মিল্ক ড্রিঙ্ক বা মিশ্রিত দুগ্ধ পানীয়। প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো দাবি করে এগুলো বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক।
তারা বলে এগুলো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে দুধের পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব দাবির কতটুকু সত্যি?
বিশ্বের এইসব হেলথ ড্রিঙ্কসের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ। শুধু হরলিক্স-এর ৮০% বিক্রি হয় ভারতেই। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এত পুষ্টিকর হলে উন্নত দেশগুলোতে এসব ড্রিঙ্কের চাহিদা এত কম কেন?
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নবগঠিত ভারত ও পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থায় ছিল। সাধারণ মানুষের অনেকেই ঠিকমতো খেতেও পেত না। তখন কিছু বিদেশি কোম্পানি এই পরিস্থিতিকে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। ‘হেলথ ড্রিঙ্ক’-এর নামে ড্রিঙ্কস বিক্রি শুরু করে এবং মানুষকে বোঝায় এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
তারপর সময়ের সাথে সাথে এই ড্রিঙ্কসগুলো সমাজে এমনভাবে জায়গা করে নেয় যে, মানুষ এগুলোর পেছনের বাস্তবতা নিয়ে ভাবেই না।
এসব ড্রিঙ্ক মূলত বার্লির আটা, গুঁড়ো দুধ ও বিপুল পরিমাণ চিনি দিয়ে তৈরি হয়। চিকিৎসকদের মতে, এসবকে হেলথ ড্রিঙ্ক বলা চলে না। বরং এগুলো শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
একটি জনপ্রিয় হেলথ ড্রিঙ্কের প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন থাকে মাত্র ৭ গ্রাম, ফ্যাট ১.৮ গ্রাম এবং ৮৫.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট । যার মধ্যে প্রায় ৩৪ গ্রামই থাকে চিনি! নিয়মিত এত চিনি গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর, যা বদহজম, বমিভাব, পেট ব্যথা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে।
হরলিক্স আজকের কোনো পণ্য নয়-এটি প্রায় ১৪০ বছরের পুরোনো। দীর্ঘদিন টিকে থাকার পেছনে রয়েছে তাদের কৌশলী মার্কেটিং, প্যাকেজিং আর সমাজে গভীরভাবে ঢুকে যাওয়া অভ্যাস। তারা বয়সভেদে নানা ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করেছে যেমন: Junior Horlicks, Women's Horlicks, Protein Plus, Cardio Plus ইত্যাদি।
এসব প্রোডাক্টের দাবি—“বাচ্চা স্মার্ট হবে, শক্তিশালী হবে, বেশি শিখবে”—সবই একরকম অলীক আকর্ষণ! ফলে সমাজের ধনী শ্রেণির মধ্যে চকোলেট, বাদাম, নির্যাসযুক্ত হাই ক্যালোরি ব্রেকফাস্ট পণ্যের প্রতি আগ্রহও বাড়ছে।